প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:৪১:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পের বসতিরা নানা সমস্যায় বসবাস করছেন। তাদের বসতঘরগুলোর বেহাল দশা জরাজীর্ণও বলা চলে।
এখানকার ঘরগুলো দিন যেতেই আরো ভেঙ্গে পড়ছে। বসতঘরগুলোর ছাউনির টিন নষ্ট হয়ে গেছে। বসতি পরিবারগুলো ভাঙ্গা ঘরে বসত করছেন। বেশীর ভাগ বসতঘরের টিনের নিচে বৃষ্টির পানি ঠেকাতে পলিথিন টানিয়ে রাখা হয়েছে। বসতি পরিবারগুলো টিনের ছাউনির নীচে পলিথিন তলায় বসবাস করছেন। এদিকে পুকুরের পাড় ভেঙ্গে বসতভিটার জায়গা কমে আসছে। আবাসন প্রকল্পে যাওয়া আসায় এলজিইডির প্রায় আটশো ফুট সড়ক পথ কাচা থাকায় বৃষ্টিতে সড়কে কাদা পানি জমে থাকে বলে জানা গেছে।
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের বনবাড়িয়া গ্রামে এলাকার গরীব, অসহায়, বসতভিটে বাড়ী না থাকাদের বসবাসে প্রায় একুশ বছর আগে সরকারী উদ্যোগে আবাসন প্রকল্প গড়া হয়েছে। সরকারী একটি পুকুরের চারটি চালায় আবাসন প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে ।
বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পে মোট ১১০টি পরিবার বসবাস করছে। বিগত ২০০৪ সালে প্রথম বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্প-১ নির্মাণ বাস্তবায়ন পর এর উদ্বোধন করা হয়। প্রথম দফায় প্রকল্প-১ এর ছয়টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়।এখানকার প্রকল্প -১ এর ছয়টি ব্যারাকে সে থেকেই মোট ৬০টি পরিবার বসবাস করছে।
বিগত ২০০৭ সালে প্রকল্প- ২ এর পাঁচটি ব্যারাকের নির্মাণ ও উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্প-২ এর পাঁচটি ব্যারাকে ৫০টি পরিবার বসবাস করছে। প্রতিটি ব্যারাকে দশটি করে পরিবার বসবাস করছে। বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পে নয় দশমিক ৬৯ একর (জলাসহ) আয়তনের সরকারী পুকুরের চারটি চালায় দুটি প্রকল্পে ১১টি ব্যারাক ও দুটি কমিউনিটি সেন্টার সেসময় নির্মাণ করা হয়। আবাসন প্রকল্পের পুকুরের জলার জমির পরিমাণ প্রায় পাঁচ একর বলে জানা গেছে ।
সরেজমিন বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পে গিয়ে দেখা ও জানা গেছে, প্রায় সবকটি ব্যারাকের ঘরের ছাউনির টিন একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। মরচে ধরা টিনে ফুটো আর ফাটা দিয়ে বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে। অনেকগুলো ঘরের ছাউনির টিন ভেঙে গেছে। দিন যেতেই আরো ভাঙছে। এখানকার বসতিরা বৃষ্টির পানি ঠেকাতে টিনের চালের ছাউনি নিচে পলিথিন নয়তো ত্রিপল টানিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ টিনের চালের উপরে পলিথিন বিছিয়ে রেখেছেন। এছাড়া অনেকগুলো ঘরের বেড়ার টিন কমবেশী নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে পুকুরের চালা ভেঙ্গে পড়ছে।এছাড়া আবাসন প্রকল্পের দুটি কমিউনিটি সেন্টারের বেহাল দশা দেখা গেছে।
বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পে বসবাস করা পরিবারগুলো কৃষিকাজ ও দিনমজুরীর আয়ের টাকায় সংসার চলে বলে জানা গেছে। এখানকার বসতি পরিবারগুলোর মাঝে শিক্ষা নিয়ে সচেতনতা আছে। অনেকেই বিভিন্ন কলেজে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসায় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে।
আবাসন প্রকল্প -২ এর বসতি কাঠমিস্ত্রী মো.শাহাবুদ্দিন , বিধবা অজুবা খাতুন , আফরোজা খাতুন বলেন তাদের ব্যারাকগুলোর ঘরের ছাউনির টিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে নিচে পলিথিন টানিয়ে রাখা হয়েছে। তারা বলেন বৃষ্টি হলে বিছানাপত্র গুছিয়ে রাখা হয়।
আবাসন প্রকল্প -১ এর বসতি নিঃসন্তান বিধবা সোনাভান খাতুন বলেন ঘরের চালের টিন নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে খুবই কষ্ট হয়। একই ব্যারাকের বসতি জান্নাতি খাতুন নিজ বাড়ীতে দর্জির কাজ করেন। তিনি বলেন সবচেয়ে বেশী সমস্যা হলো বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়া। বেশ কষ্টে বসবাস করছেন বলে জানান।
বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্প- ১ এর সভাপতি আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন বলেন, এখানকার ব্যারাকের ঘরের ছাউনির টিন একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে সবাইকে কমবেশী দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে সময় কাটাতে হয়। বৃষ্টির পানি ঠেকাতে টিনের চালের নীচে পলিথিন কিংবা ত্রিপল টানিয়ে রাখা হয়েছে। আবাসন প্রকল্পের বসতি পরিবারগুলোর প্রায় সবাই গরীব। দিন আয়ে দিন খাওয়া তাদের জীবন। এখানকার বসতি পরিবারের কেউ কোনো উপায়ে টাকা যোগাড় করে ঘরের ছাউনির টিন বদলানো কিংবা মেরামত করতে চাইলেও তা করতে পারেন না বলেন জানানো হয়। কেননা একটি ব্যারাকে দশটি করে পরিবার বসবাস করেন। ঘরের ছাউনির টিন বদলাতে হলে সবাইকে একসাথে তা বদলাতে হবে।
প্রতিবেদককে আবাসন প্রকল্প -২ এর সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, পুকুরের চালা দিনে দিনে ভেঙ্গে ঘরের কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন ব্যারাকের ঘরগুলো হুমকির মুখে পড়েছে বলা চলে। তিনি আরো বলেন আবাসন প্রকল্প নির্মাণ ও বসবাস শুরুর প্রথম দিকে তিনটি ব্যারাকের সামনে পুকুরের চালা ব্লক দেওয়া হয়েছিল। তার ব্যারাকের বসতঘরের চাল নষ্ট হয়ে গেছে। বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পের পুকুরটিতে এখানকার বসতি পরিবারগুলো নিজেরা মিলিতভাবে মাছ চাষ করছেন। এর আয়ের টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবেন বলে জানা গেছে।
তিনি বলেন, বিগত বছর ছয়েক সময়ে তাদের আবাসন প্রকল্পের বসত ঘরগুলোর হাল অবস্থা ও দুর্ভোগের বিষয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। কোনো কাজ হয়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পের বসতঘরগুলোর টিন নষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে একাধিকবার প্রকল্প করে উর্ধ্বতন বিভাগে পাঠানো হয়েছিলো। এরপর উর্ধ্বতন বিভাগ থেকে সরেজমিনে দেখে গিয়েছে। বনবাড়িয়া আবাসন প্রকল্পের হালের সব সমস্যা নিয়ে সরেজমিনে দেখে জেনে আবারো একটি প্রকল্প করে উর্ধ্বতন বিভাগে পাঠানো হবে। প্রকল্পের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলে বসতঘরগুলো মেরামত ও সমস্যদির সমাধান করা যাবে।