প্রতিনিধি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:১৮:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
এবিএম ফজলুর রহমান, মস্কো থেকে
বাংলাদেশের শিল্প ও স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তনের আনতে পারে অ্যাডিটিভ প্রযুক্তি। অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং বা থ্রিডি প্রিন্টিং এর মাধ্যমে উপাদান কম অপচয় করে, খরচ ও সময় বাঁচিয়ে জটিল সব যন্ত্রাংশ তৈরি করা সম্ভব। রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম এই প্রযুক্তি পারমাণবিক খাতে ব্যবহার করে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশেও এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্মকমর্তারা।
বুধবার রাশিয়ার মস্কো শহরে রাশিয়ার পরমানু সংস্থা রোসাটম আয়োজিত রোসাটম হেড অফিসে এক সেমিনারে এই সম্ভাবনার কথা জানানো হয়।
বিশেষগরা জানান, অ্যাডিটিভ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো থ্রিডি প্রিন্টিং এর সবচেয়ে বড় সুবিধা খরচ, সময় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। জটিল এবং কাস্টমাইজড যন্ত্রাংশ তৈরিতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অ্যাডিটিভ প্রযুক্তি কম খরচ হয়। কারণ এতে উপাদানের অপচয় কম হয় এবং সরঞ্জাম তৈরির জন্যও আলাদা খরচ লাগে না। যার সুফল পাওয়ার দাবি করেছে রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম।
অ্যাডিটিভ প্রযুক্তিতে ডিজাইন থেকে সরাসরি এবং দ্রুত প্রোটোটাইপ বা চূড়ান্ত পণ্য তৈরি করা যায়, যা উৎপাদনের সময় কমিয়ে আনে। পারমাণবিক শক্তি খাতে, এই প্রযুক্তি উচ্চ-মানসম্পন্ন, নির্ভরযোগ্য এবং জটিল যন্ত্রাংশ দ্রুত সরবরাহ করতে পারে বলে জানান রোসাটমের প্রকৌশীলরা। বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ইমপ্লান্ট এবং Surgical guides তৈরি করে অপারেশনের সফলতা ও নিরাপত্তার হার অনেক বাড়ানো সম্ভব বলেও জানান তারা।
এই প্রিন্টার ব্যবহার করে অ্যাভিয়েশন ও মহাকাশ খাতের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পাশাপাশি পারমাণবিক ও সাধারণ শিল্পেত বিভিন্ন যন্ত্র বানানো হয়। রোসাটম তা সফলতার সঙ্গে করে যাচ্ছে।
তারা বালন, পারমাণবিক শক্তি খাতে অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ভূমিকা রাখে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান রুশ অ্যাডিটিভ প্রযুক্তি সংশ্লিটরা। নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশ দ্রুত উৎপাদন করে রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যবহৃত সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানির উপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব। এছাড়া রোসাটমের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের জন্য এই প্রযুক্তির প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে আশা রাশিয়ার অ্যাডিটিভ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টদের।
অ্যাডিটিভ প্রযুক্তির মূল উপাদান স্টেইনলেস স্টিল, টাইটানিয়াম মিশ্রধাতু, নিকেল-ভিত্তিক সুপারঅ্যালয় ও অ্যালুমিনিয়াম মিশ্রধাতু যা বাংলাদেশের শিল্প খাতের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে টারবাইন ব্লেড, পাম্পের যন্ত্রাংশ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা সম্ভব। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য অ্যাডিটিভ প্রযুক্তি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এটি বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবার সুযোগ আরো বাড়ানোর পাশাপাশি চিকিতসা খরচও কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে বলে জানান রোসাটমের কর্মকর্তারা।
সেমিনারে রোসাটম পরিচালক ইলিয়া কাফেলা ইসভলিসহ অন্য এক্সপার্টরস বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ, মিশর, তুরস্ক, উইজকেবিস্থান, কিরগিজস্থানসহ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা এই সেমিনারে অংশ নিচ্ছে।
পরে ২০০ কিলোমিটার দুরে জিও পদলেস্কি পারমানবিক পাওয়ার প্লান্ট ঘুরে দেখানো হয়।
এ ছাড়া ক্রেমলিন, রেড স্কয়ার, মস্কোর ঘন্টাসহ বিভিন্ন দশনীয় স্থান ঘুরে দেখানো হয়।
আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সেন্টপিটাসবাগে রাশিয়ার পারমাণবিক যুগের ৮০ বছর উদযাপনে ওয়াল্ড এটমিক উইক উৎসবের উদ্বোধন করা হবে। রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী রাফায়েল ম্যসরিয়নো এই উতসবের উদ্বোধন করবেন।
এবিএম ফজলুর রহমান
মস্কো, রাশিয়া
২৪-০৯-২০২৫ ইং।অব