প্রতিনিধি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৬:৫১:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
আশফাক আশিক, নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, প্রাণনাশের হুমকি এবং সশস্ত্র নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে এক নারীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় মোসাঃ রুনা খাতুন নামের এক নারী গত ২১ সেপ্টেম্বর বাগাতিপাড়া মডেল থানায় এজাহারটি দায়ের করেন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত ২৬ ও ২৯ আগস্ট রাতে উপজেলার মাকুপাড়া এলাকায় একটি ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের আশপাশে অভিযুক্তরা গোপন বৈঠক করে। এসব বৈঠকে ভারতে পলাতক কিছু রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগাযোগ করে দেশে নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা করে তারা।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, তারা গ্রামের নিরক্ষর মানুষের নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বিদেশ থেকে অর্থ এনে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করছে।
এজাহারে অভিযুক্তদের নাম
অভিযোগে যাদের নাম উঠে এসেছে, তারা হলেন:
জোসনা সরকার (সাবেক মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী)
রেজাউল করিম, কাওসার জামান,এএসএম আল-আফতাব খান সুইট (জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি, নাটোর জেলা)
মো. আব্দুল্লাহ-আল-আনিক (নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠনের নেতা)
মো. আনোয়ার হোসেন (জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা)
মো. সবুজ, মো. নাজিম মণ্ডল, মো. মিজানুর রহমান ওরফে ‘ফিটিং
মিজান’ (নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা এবং আলোচিত হত্যা মামলার আসামি) তবে অভিযুক্ত জোসনা সরকার জানান, তিনি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
ধর্ষণ ও হামলার অভিযোগ
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধোপার বিল এলাকায় স্বামীর বাড়ি যাওয়ার পথে রুনা খাতুন একটি সন্দেহজনক দৃশ্য দেখতে পান। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তখন তিনটি কার্টনে অস্ত্র ও বিস্ফোরকভর্তি মালামাল একটি সাদা মাইক্রোবাসে উঠাচ্ছিল। রুনাকে দেখতে পেয়ে তারা ধাওয়া করে এবং তাকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়।
এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে রুনার বাবার বাড়িতে অস্ত্রসহ হামলা চালিয়ে তাকে এবং তার পরিবারকে জিম্মি করে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করে অভিযুক্তরা। তার স্বামী, যিনি একজন সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী, তাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
সশস্ত্র আন্দোলনের পরিকল্পনার অভিযোগ
এজাহারে আরও বলা হয়, অভিযুক্তরা “শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে সশস্ত্র আন্দোলনের” পরিকল্পনায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত এবং স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এজাহারে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন এক অটোচালক, একজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং এক পথচারী।
ভুক্তভোগীর দাবি ও নিরাপত্তাহীনতা
ভুক্তভোগী রুনা খাতুন বলেন,
> “আমার সন্তানদের নিয়ে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই চক্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি নেই।”
তিনি আরও জানান, তার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ছবিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র এজাহারের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ইউএনও, ডিসি এবং এসপি নাটোরের স্বাক্ষরিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও রয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য
বাগাতিপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান,
> “এজাহার প্রাপ্তির বিষয়টি যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল প্রশাসনের প্রতি অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে রুনা খাতুন ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আশফাক আশিক নাটোর।
০১৭৩৮-২১৮০৬০